লুসাই পাহাড়ের বুক চিরে প্রবাহিত কর্ণফুলির তীর ঘেঁষে অবস্থিত প্রচ্যের রানী চট্টগ্রাম শহরতলীর ঐতিহ্যবাহী বোয়ালখালীউপজেলা। শিক্ষা, শিল্প সাহিত্য, সংস্কৃতিতেসম্ভাবনাময় এ উপজেলায় রয়েছে প্রখ্যাত অলী বু-য়ালী কালান্দর শাহ (রাঃ) মাজার, হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী মেধস মুনির আশ্রম, বৌদ্ধবিহারসহ অসংখ্যা ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান।কথিত আছে, হযরত বু-য়ালী কালান্দর শাহ (রাঃ) নামানুসারে এ উপজেলার নামকরণ করা হয়।বোয়ালখালীর পশ্চিমে দেশের একমাত্র বাণিজ্য নগরী চট্টগ্রাম, পূর্বে অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় করলডেঙ্গা পাহাড়, দক্ষিনে বিপ্লবী মাষ্টারদা সূর্যসেনের জম্মভুমি বৃহত্তর পটিয়া, উত্তর পূর্বে রাউজান, রাঙ্গুনিয়া এবং বান্দরবান পার্বত্য অঞ্চল।বোয়ালখালী উপজেলাসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম তথা দক্ষিণনাঞ্চলের জনগণের যোগাযোগের অন্যতম মাধ্যম বৃটিশ আমলের কর্ণফুলী নদীর উপর নির্মিত রেল সড়ক সেতু। এ সেতু একদিকে যেমন যাতায়াত ব্যবস্থা করেছে সহজতর অপরদিকে এ উপজেলাকে করেছে আরও আকর্ষনীয় ও সৌন্দর্যমন্ডিত।
শিক্ষা, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতির লীলাভুমি এ উপজেলায় জম্মগ্রহণ করেছেন বৃটিশ সরকার হতে রত্নগর্ভা খ্যাতিপ্রাপ্ত মুক্তকেশী দেবী যাঁরা ১১ জন সন্তানের মধ্যে ডঃ বিভূতিভূষণ সহ ৫ জন ডক্টরেট/ডিএসসি। কিংবদন্তীতুল্য একুশে পদকপ্রাপ্ত মহান ব্যাক্তিত্ব কবিয়াল রমেশ চন্দ্রশীল ও বিনয় বাশিঁ জলদাশ, আঞ্চলিক গানের সম্রাজ্ঞী শিল্প শেফালী ঘোষ, চলচ্চিত্র শিল্প কবরী সরোয়ার এবং এ উপমহাদেশের প্রখ্যাত চক্ষু বিশেষজ্ঞ ডাঃ এ,কি,এম হারুনুর রশিদ প্রমুখ এ উপজেলারই সন্তান। এছাড়া ডাঃ আহমদ শরীফ এর মত প্রথিতযশা সাহিত্যিক ও পাকিস্তান আমলে দইটি বিষয়ে এম.এ ডিগ্রি প্রাপ্ত মরহুম এম,এন হক সহ অসঙখ্য জ্ঞানীগুনি ব্যাক্তি এ উপজেলায় জম্ম গ্রহণ করেছেন।
১৯৮৩ সালে বোয়ালখালী উপজেলা হিসাবে ঘোষনা করা হয়। এর আগে এটি পটিয়া মহকুমার অংশ ছিল। চট্টগ্রাম সিটি কপোররেশন জিরো পয়েন্ট থেকে মাত্র ১২ কিলোমিটার দুরে অবস্থিত বোয়ালখালী। ১৩৭.২৭ বর্গ কিলোমিটার আয়তন বিশিষ্ট এ উপজেলায় প্রায় আড়াই লক্ষ মানুষের আবাস। শিক্ষা দীক্ষায় অগ্রসর। এ উপজেলায় রয়েছে প্রাচীনতম ঐতিহ্যবাহী কানুনগো পাড়ায় স্যার আশুতোষ সরকারী কলেজসহ ০৪টি কলেজ, ২৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৩টি মাদ্রাসা এবঙ ১০৭টি প্রাথমিক বিদ্যালয়।
যোগাযোহ ব্যবস্থার উন্নয়নের ফলে চট্টগ্রাম শহরের সাথে বোয়ালখঅলীর যাতায়াত অত্যন্ত সুগম হয়েছে। উপজেলার প্রধান সড়ক বিশেষ করে কানুনগোপাড়া-হাওলা ডি.সি সড়ক, শরৎসেন সড়ক, কালুরঘাট-ভান্ডালঝুড়ি সড়ক সমূহ উন্নয়নের ফলে উপজেলার আন্তঃযোগাযোগ ব্যবস্থা পূর্বের যে কোন সময়ের তুলনায় সহজতর হয়েছে। এছাড়া নদী পথে যোগাযোগ অন্যতম মাধ্যম হিসাবে ইঞ্জিন চালিত বোট, সাম্পান ও নৌকা উল্লেখযোগ্য।
শিল্পায়নে সম্ভাবনাময় বোয়ালখালী উপজেলার পশ্চিম গোমদন্ডীর পূর্ব কালুরঘাট চরখিজিরপুরে গড়ে উঠেছে রিজেন্ট টেক্সটাইল লিমিটেড, কনফিডেন্স সল্টসহ বৃহৎ শিল্প কারখানা। এছাড়াও আরো নতুন নতুন শিল্প কারখানা নির্মানাধীন পর্যায়ে। এ শিল্প কারখানাগুলো প্রতিষ্ঠিত হলে এ এলাকার হাজার হাজার প্রশিক্ষিত ও অর্ধশিক্ষিত যুব-যুবগণের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে। ফলে একদিকে যেমন তাদের অর্থনৈতিক উন্নয়নসাধিত হবে, অপরদিকে ব্যবসা-বানিজ্যের প্রসারের ফলে জনমনে ফিরে আসবে নতুন প্রাণচাঞ্চল্য।
ঐতিহ্যবাহী এ উপজেলার জনগণ সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের দিক থেকেও কোন অংশে পিছিয়ে নেই। এ উপজেলার বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোর কার্যক্রম সাংস্কৃতিক অংঙ্গনকে মুখরিত রাখে।
এ উপজেলার করলডেঙ্গা, জৈষ্ঠ্যপুরা ও আমুচিয়ার দৃষ্ঠিনন্দন পাহাড় ও কর্ণফুলিতীর বেষ্টিত প্রাকৃতিক সৌন্দর্য পর্যটন শিল্পের অমিত সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে। সরকারী ও বেসরকারী উদ্যেগে এখানে গড়ে উঠতে পারে পর্যটন শিল্প। সৌন্দর্য-পিপাসু মানুষের জন্য এ এলাকা একটি আকর্ষনীয় স্থান।
স্কাউটিং আন্দোলনেও এ উপজেলার গৌরবমময় অবদান রয়েছে। স্কাউটিং কার্যক্রম ছেলে-মেয়েদের সহ-শিক্ষা কার্যক্রম, শৃঙ্খলা, ভাতৃত্ববোধ ও নেতৃত্বের গুনাবলী অর্জনে ইতিবাচক ভুমিকা পালন করা যাচ্ছে। স্কাউটিং এ উপজেলার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হতে প্রেসিডেন্ট এওয়ার্ড অর্জন স্কাউটস আন্দোলন গতিশীলতা এনেছে।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS